ঢাকা , শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫ , ১৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​মৌমাছির সঙ্গে বসবাস, বছরে আয় লক্ষাধিক টাকা

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ৩০-০১-২০২৫ ০২:৫৪:০২ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ৩০-০১-২০২৫ ০২:৫৪:০২ অপরাহ্ন
​মৌমাছির সঙ্গে বসবাস, বছরে আয় লক্ষাধিক টাকা ​ছবি: সংগৃহীত
মৌমাছির ভয় পায় না এমন প্রাণী নেই। মৌমাছির দলবদ্ধ আক্রমণে বিষাক্ত হুলের বিষে মারা যায় যেকোনো প্রাণী। ক্ষুদে এই প্রাণীকে ভয় পায় বনের হাতিও। আর সেই মৌমাছির সঙ্গে একই বাড়িতে দীর্ঘ সাত বছর ধরে বসবাস করছেন কৃষক আলমগীর হোসেন (৪৫)।

বিষয়টি অবিশ্বাস্য হলেও এমনই চিত্র যশোরের মনিরামপুর উপজেলার খানপুর সরদারপাড়া গ্রামের আলমগীর হোসেনের বাড়িতে। দোতলা বাড়ির বারান্দা, বেলকুনি, সানসেট, দেয়ালসহ বিভিন্ন প্রান্তে বাসা বা চাক বেঁধে বসবাস করছে মৌমাছি। তার এ বাড়িতে মৌচাকের সংখ্যা ২২টি। একই বাড়িতে কয়েক লাখ মৌমাছির সঙ্গে দীর্ঘ সাত বছর পার করছেন পরিবারের সদস্যরা। মৌমাছির দ্বারা কখনও আক্রমণের শিকার হননি পরিবারের সদস্যরা বা প্রতিবেশীরা। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের চিত্র ফুটে উঠেছে মৌমাছি এবং এই পরিবারটির মধ্যে।

কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, এই মৌমাছিগুলো আমাদের পরিবারের অংশ। তাদের কখনও আমরা ক্ষতি করি না বা ক্ষতি হতে দেই না। তেমনি এই লাখ লাখ মৌমাছিও আমাদের পরিবারের সদস্য বা প্রতিবেশীদের কখনও আক্রমণও করেনি। আমার বাবা বেশিরভাগ সময় তাদের দেখাশোনা করে। তাছাড়া আমার মা, স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের অন্যরাও তাদের দেখভাল করে।

তিনি বলেন, প্রতিবছর কার্তিক মাসে এ মৌমাছির দলগুলো আমাদের বাড়িতে এসে হাজির হয় এবং জ্যৈষ্ঠ মাসের দিকে চলে যায়। মৌমাছিগুলো যখন চলে যায় আমাদের মনটাও খুব খারাপ হয়ে যায়। আমরা তাদের ফিরে আসার অপেক্ষায় আবার দিন গুনি।

মৌচাকগুলো থেকে মধু সংগ্রহের বিষয়ে কৃষক আলমগীর বলেন, প্রতি বছর মৌচাক থেকে আমরা তিনবার মধু সংগ্রহ করি। ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা কেজি দরে আমরা এই খাঁটি মধু বিক্রি করে থাকি। প্রতিবারে আমরা প্রায় এক মণ (৪০ কেজি) করে মধু সংগ্রহ করি। বছরে লক্ষাধিক টাকা আয় হয় এ মধু বিক্রি করে।

কৃষক আলমগীর হোসেনের বাবা ইসাহাক আলী বলেন, সাত বছর আগে বাড়ির দক্ষিণ পাশে একটি গাছে মৌমাছিতে চাক বেঁধেছিল। গাছের নিচে বাঁধা ছিল কৃষক আলমগীরের তিনটি গরু। হঠাৎ মৌমাছিরা ওই গরুগুলোকে আক্রমণ করে। এ সময় প্রতিবেশীরা মৌমাছির চাকটিকে পুড়িয়ে দিতে বলেন, তবে চাক পোড়াননি আলমগীর হোসেন। এরই কিছুদিন পর মৌমাছিরা এসে আলমগীরের বাড়িতে প্রথম সাতটি চাক বেঁধে বসবাস শুরু করে।

আলমগীরের ফুফু আছিয়া খাতুন ও প্রতিবেশী ওলিয়ার রহমান বলেন, প্রথম দিকে কামড়ানোর ভয় পেলেও এখন আর ভয় করে না। কেননা মৌমাছি আমাদের কাউকে আক্রমণ করে না। কামড়ায়ও না। আমরাও কখনও ওদের ক্ষতি করি না।
মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, এটি সুন্দরবনের মেইলি সিরা প্রজাতির মৌমাছি। এই মৌমাছিগুলো প্রকৃতি ও পরিবেশ বোঝে। যেখানে নিরাপত্তা, বাঁচার পরিবেশ ও খাবারের ভালো সুব্যবস্থা পায় সেখানেই মূলত তারা বাসা বাঁধে। এক বছর যেখানে বাসা বাঁধে নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর চলে যাওয়ার সময় সেখানে কিছু আলামত রেখে যায়। পরের বছর আবার সেখানেই ফিরে আসে।


বাংলা স্কুপ/ প্রতিনিধি/ এনআইএন/ এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ